, বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি।।সাইদুর রহমান সাঈদ
বরিশাল জেলার বৃহত্তম উপজেলা বাকেরগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই দিন দিন বাড়ছে ইটভাটা। সেসব ভাটায় কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। এতে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। আর এসব ইট ভাটায় ইট প্রস্তুতির জন্য বেশিরভাগ মাটি সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন নদীর চরের মাটি কেটে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছেও সঠিক তথ্য নেই এ সকল অবৈধ ইটভাটার। মাঝেমধ্যে এসব ভাটা বন্ধে অভিযান চালানো হয়, জরিমানাও করা হয়। তবে এরপরও থামে না ভাটার কার্যক্রম।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধ বা উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২০২২ সালে একটি রিট করা হয়। এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের মার্চে হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দেন। গত বছরের ১৫ মার্চের ওই নির্দেশনা অনুসারে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে অবৈধ ১ হাজার ৮৪টি ইটভাটা বন্ধ বা অপসারণ করতে হবে। ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিভাগীয় কমিশনারদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইট ভাটায় মাঝেমধ্যে নামে মাত্র অভিযান চালানো হয়, কয়েক দিন উৎপাদন বন্ধ থাকে। এরপর সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে আবারও শুরু হয় ইট উৎপাদন। এভাবেই চলে আসছে যুগের পর যুগ থেকে।
প্রতিবছরের তুলনায় এই বছর কাঠ খড়ি দিয়ে এইসব ইটভাটা ইট পোড়ানো হচ্ছে। আর ইট পোড়ানোর জন্য ইট ভাটার মালিকরা পুর্ববর্তি বছর গুলির ন্যায় এবারেও জ্বালানী হিসেবে কাঠ খড়ি দিয়ে পোড়াচ্ছে। এ জন্য ইটভাটার মালিকগন গত কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার মন কাঠখড়ি সংগ্রহ করে তাদের ইট ভাটার নিদৃষ্ট স্থানে মজুদ করে ইট পোড়াচ্ছে। এখনও কাঠ খড়ি সংগ্রহ অব্যহত রয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে কাঠখড়ি দিয়ে নির্বিঘ্নে পোড়ানো হচ্ছে ইট। আর এ ভাবেই চলতে থাকবে ইট পোড়ানোর পুরো মৌসুম।
তবে এবারেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করবেন কি না এ নিয়ে সচেতন মহল সন্দিহান। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও, তা মানা হচ্ছে না। ইট পোড়ানোর মৌসুম আসতেই আবার চালু করা হয়েছে অবৈধ ইটভাটাগুলো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি ইউনিয়ন সহ গারুড়িয়া,দুধল, কবাই, নলুয়া,চরামদ্দি,চরাদি,ফরিদপুর,দাড়িয়াল ইউনিয়নে অর্ধশত ড্রাম চিমনি অবৈধভাবে ইট ভাটা গড়ে উঠেছে।
প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বনাঞ্চল উজাড় করে ট্রলি ও ট্রলারযোগে কাঠ এনে ইট ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অশাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ইট ভাটার মালিকরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ড্রাম চিমনি ইট ভাটা দেখা গেছে সরেজমিনে। ইট ভাটা মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়লার দাম বাড়তি থাকায় লাকড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে।
আর এসব ইটভাটা তদারকি করার জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বন বিভাগ,স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু তাদের রহস্যজনক নীরবতার কারণে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় অধিকাংশ ইটভাটা মালিক এসব আইনের তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে বাকেরগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ পাঁচটি ইটভাটা গুড়িয়ে দিয়েছে। অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, শীঘ্রই অবৈধ ইটভাটা চিহ্নিত করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে।