ঝালকাঠি প্রতিনিধি।। বরিশাল: ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. ইলিয়াছ মিয়া কচুয়া বাজারের প্রায় ৩ কোটি টাকার সরকারি জমি নিজের বাবা-মাকে ভূমিহীন দেখিয়ে ভোগ করে আসছেন। এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে জনস্বার্থে ঝালকাঠির সহকারী জজ আদালতে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও কাঁঠালিয়ার সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) ৭ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, কাঁঠালিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের অধীন পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক মো. ইলিয়াছ খান তার বাবা মো. আবুল কালাম খান ও মা মোসা. আনোয়ারা বেগমকে ভূমিহীন দেখিয়ে শৌলজালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া বাজার সংলগ্ন সরকারি খালের জেএল ৩৯ কচুয়া মৌজার এস এ ১ নম্বর খতিয়ানের ১৬১৫ নম্বর দাগের ভরাটকৃত অংশের ১৬ শতাংশ জমি নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৩ জুলাই ২০২০ তারিখে বন্দোবস্ত নেন।
বিষয়টি দীর্ঘদিন গোপন রেখে গত ১ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ জমি ভোগ দখলে যান। তখন বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। স্থানীয় লোকজন ও কচুয়া বাজার কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে এ অনিয়মের কথা অবহিত করে বন্দোবস্ত বাতিলের অনুরোধ জানান।
কিন্তু জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২ জানুয়ারি বাজার কমিটির সভাপতি একেএম মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক এসএম মনিরুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য এইচ এম নাসির উদ্দিনসহ ৯ জন বাদী হয়ে কাঁঠালিয়া সহকারী জজ আদালতে মো. আবুল কালাম খান, তার স্ত্রী মোসা. আনোয়ারা বেগম, ছেলে মো. ইলিয়াছ খান, জেলা প্রশাসক ঝালকাঠি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ঝালকাঠি, সহকারী কমিশনার ভূমি কাঁঠালিয়া ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শৌলজালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ১৬ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেন। মামলার বাদীরা জনস্বার্থে এই বেআইনি বন্দোবস্ত বাতিল করে উক্ত জমি বাজারের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে অবমুক্ত করার জন্য জোর দাবি জানান।কেননা পাটিখালঘাটা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (পিওন) ভূমি অফিসে চাকরির সুবাদে তার বাবা আবুল কালাম ও মা আনোয়ারা বেগম ভূমিহীন না হওয়া সত্ত্বেও তাদের ভূমিহীন দেখিয়ে মিথ্যা ভূমিহীনের কাগজপত্র তৈরি করে তৎকালীন কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কশিনার ভূমি আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীনকে ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকার এ সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিয়েছেন।
কচুয়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ আলম জানান, কচুয়া বাজারটি অনেক পুরোনো, কিন্তু সরকারি জমি না থাকার কারণে বাজারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ মো. ইলিয়াছ মিয়া সরকারি চাকরি করে তার বাবা ধনী হওয়া সত্ত্বেও বাজারের সরকারি জমি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জমি দখল করায় আমরা ক্ষুব্ধ, আমরা এর বিচার চাই। মো. মোস্তফা হেলাল কিরণ জানান, কোনো তদন্ত ছাড়া ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি কীভাবে একজন ধনী লোককে দিলো বুঝি না। আমরা এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পাটিখালঘাটা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক মো. ইলিয়াছ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা-মায়ের কোনো জমি নেই। তারা ভূমিহীন। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম জানান, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাঁঠালিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ববি মিতু জানান, মামলার বিষয়টি আমি অবগত। এখন পর্যন্ত আদালতের কোনো কাগজপত্র পাইনি। পাওয়ার পর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।