আজকের গণমত ডেস্ক।। নাব্য সংকট দূর না হলে পায়রার তীরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পায়রা নদীর তীরে কয়লাভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান। আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি উৎপাদনে রয়েছে, একটি উৎপাদনের
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পায়রা নদীর তীরে কয়লাভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান। আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি উৎপাদনে রয়েছে, একটি উৎপাদনের অপেক্ষায় ও আরেকটি নির্মাণাধীন। এগুলোয় কয়লা পরিবহনে ব্যবহার করা হয় রাবনাবাদ চ্যানেল। আবার পায়রা বন্দরকেন্দ্রিক দেশী-বিদেশী কোম্পানিগুলোর যে কর্মপরিকল্পনা রয়েছে তা-ও রাবনাবাদ চ্যানেল ঘিরেই। কিন্তু নাব্য সংকটের কারণে এ চ্যানেলের গভীরতা কমে গেছে। ফলে কয়লা বা অন্যান্য পণ্যবাহী বড় জাহাজগুলো (মাদার ভেসেল) জেটিতে নোঙর করতে পারছে না।
আসন্ন শীত মৌসুমে চ্যানেলের গভীরতা আরো কমে গেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন কয়লা সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রসংশ্লিষ্টরা।
বন্দর ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে বড় জাহাজ চলাচলের জন্য রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা গত বছর সাড়ে ১০ মিটারে উন্নীত করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় জাহাজ চলাচলের জন্য চ্যানেলে ৮ দশমিক ৭ মিটার গভীরতা প্রয়োজন। কিন্তু এখন জোয়ার-ভাটাভেদে চ্যানেলের গভীরতা সাড়ে ৬ থেকে ৫ দশমিক ৯ মিটারেও নেমে আসছে।
চ্যানেলের গভীরতা নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে পায়রায় নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য, বড় জাহাজ চলাচল করতে না পারলে এ বন্দর বাণিজ্যিকভাবে কখনো লাভজনক হবে না। আবার পায়রার তীরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বড় জাহাজ থেকে লাইটারে করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা নিতে খরচ বেড়ে যাবে। আর খরচ বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে বিদ্যুতের দামেও।
জানা গেছে, কলাপাড়ায় নির্মিত আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেডের (আরএনপিএল) ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কমিশনিংয়ের জন্য ৬০ হাজার টনের একটি কয়লাবাহী জাহাজ আসে পায়রায়। কিন্তু চ্যানেলের গভীরতা না থাকায় মাদার ভেসেলটি চ্যানেলে
প্রবেশ করানো যায়নি। ওই জাহাজে আনা কয়লার পুরোটাই লাইটার জাহাজে করে কোল ইয়ার্ডে আনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান। এভাবে লাইটারেজে করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা আনতে টনপ্রতি ৭-৮ ডলার অতিরিক্ত খরচ হয়েছে বলে জানায় আরএনপিএল কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পর রাবনাবাদ চ্যানেলে ‘মেইনটেনেন্ট ড্রেজিং’ করার কথা ছিল। কিন্তু সে চুক্তি আর হয়নি।
কর্মকর্তারা বলছেন, সক্ষমতার অর্ধেক কয়লা নিয়েও বড় জাহাজগুলোকে (৫৫-৬০ হাজার টন) জেটিতে আনতে গেলে অন্তত সাড়ে ৬ মিটার গভীরতা প্রয়োজন হয়।
পায়রা ঘেঁষে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল)। এর একটি চালু রয়েছে, যার কয়লা আমদানি হয় রাবনাবাদ চ্যানেল দিয়ে। বিসিপিসিএলের দ্বিতীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণাধীন। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি ২০ শতাংশের মতো। তবে চ্যানেলের যে পরিস্থিতি তাতে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মাওলা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাবনাবাদ চ্যানেলে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। আগামী শীত মৌসুমে সংকট বাড়বে। চ্যানেলটিতে জাহাজ চলাচলের জন্য অবিলম্বে ড্রেজিং প্রয়োজন। নয়তো বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ বড় ধরনের সংকটে পড়বে।’
রাবনাবাদ চ্যানেলের নাব্য সংকট নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে আরএনপিএল। এরই মধ্যে এ কোম্পানির ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনক্ষম হয়ে উঠেছে। আগামী ডিসেম্বরে ‘ব্যাকফিড পাওয়ার’ সংযোগ পেলে নতুন বছরের মার্চে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। ফলে তখন নিয়মিতভাবে কেন্দ্রটির জন্য কয়লা আমদানি করতে হবে। কিন্তু চ্যানেলের গভীরতা কমে যাওয়ায় কয়লা পরিবহনে বড় জাহাজ জেটিতে আনা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সেলিম ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গভীরতা কমে যাওয়ায় কয়লাবাহী বড় জাহাজ চ্যানেল দিয়ে আনা যাচ্ছে না। লাইটার জাহাজ ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাতে টনপ্রতি কয়লা পরিবহনে খরচ বাড়ছে ৭-৮ ডলার। গভীরতা সংকটের বিষয়টি জানিয়ে আরএনপিএল থেকে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করবে।’
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রাবনাবাদ চ্যানেল খনন ও রক্ষণাবেক্ষণে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। এতে খরচ হয় ৬ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খনন ও রক্ষণাবেক্ষণকাজে খরচ হয় ৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। গত বছরের মার্চে চ্যানেলটির সর্বোচ্চ গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও জরুরিভাবে কাজ চলে গত ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর থেকে খননকাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
রাবনাবাদ চ্যানেলের ড্রেজিংসহ অন্যান্য পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বণিক বার্তাকে জানান, রাবনাবাদ চ্যানেলের বিষয়ে ভালো বলতে পারবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। তবে কয়েকবার চেষ্টা করেও এ বিষয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রি