স্টাফ রিপোটার ॥
বরিশালঃ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সেসব এলাকার বাসিন্দারা। ফলে বেড়েছে নদ-নদীর পানিও। আর বরিশাল নগরীতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার। রোববার বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আবদুল কুদ্দুস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৪৫ কিলোমিটার। ভারি বর্ষণের ফলে কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩৮ সেমি উপর থেকে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানান, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করলেও কোনো নদ-নদীর পানি এখনও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তবে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরিশালে সর্বোচ্চ ১৭৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার, ভোলায় ১৫০ মিলিমিটার, ঝালকাঠিতে ১৩৯ মিলিমিটার, পিরোজপুরে ১৫৭ দশমিক ২ মিলিমিটার, বরগুনায় ১২৯ মিলিমিটার ও পটুয়াখালীতে ১৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, একটানা বৃষ্টিতে বরিশাল নগরীর বটতলা নবগ্রাম রোড, মুন্সিগ্যারেজ, বগুড়া রোড, কালিবাড়ি রোড, পলিটেকনিক রোড ও ভাটিখানাসহ বেশিরভাগ সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। কোথাও কোথাও বাসা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে পানি। বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ দোকানপাট। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। এর বাইরে জোয়ারের পানি বৃদ্ধিপেয়ে নগরীর নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
ওবিবার দুপুরে কীর্তনখোলা নদীর জোয়ারের পানি ঢুকে পরেছে বরিশাল নগরীর জিয়ানগর, চাদমারী, পলাশপুর, মোহম্মদপুর, রুপাতলী, কালিজিরা, জাগুয়া এলাকায়। এছাড়া জেলার ১০ উপজেলার হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী, বাবুগঞ্জ, বানারিপাড়া ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের নিন্মাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
বরিশাল নগরীর সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকার মাইনুল ইসলাম শুভ নামে এক বাসিন্দা জানান, সিটি করপোরেশন ড্রেন পরিষ্কার না করার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সড়কে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের।
মো: সায়েম মাহমুদ নামের এক শিক্ষার্থী জানান, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও জমেছে পানি। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে বন্ধ পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী।
এদিকে ১৭ ঘণ্টা পর বরিশালের অভ্যন্তরীণ ১০ রুটের লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় রোববার সকাল ৯টার দিকে আবারও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে ৬৫ ফুট কম দৈর্ঘ্যের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল নৌ-বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঝড়ো বাতাসের কারণে ৬৫ ফুট কম দৈর্ঘ্যের লঞ্চ বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে অভ্যন্তরীণ ১০টি রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। তবে রোববার সকাল ৯টা থেকে আবারও বরিশালের অভ্যন্তরীণ ওই ১০ রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আবদুল কুদ্দুস জানান, গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে বায়ু চাপের তারতম্য হয়েছে। এ কারণে বরিশাল বিভাগের বিভিন্নস্থানে ভারি ও অতিভারি বৃষ্টি হচ্ছে। যা আরও ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে। এ কারণে ঝড়ো বাতাস বইছে। নদ-নদীর পানি বাড়বে। তাই সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর ও নৌবন্দরে ২ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে সোমবারের মধ্যে বৃষ্টিপাত কমার সম্ভবনা রয়েছে। ###