বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি ।। বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানায় কর্মরত এসআই এনামুল হক সহিদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এস আই এনামুল থানায় দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন ঘটনায় টাকার বিনিময়ে নিরীহ মানুষ তার রোষাণলে পড়ে বহু মামলার আসামি হয়েছে। তিনি এক পক্ষের থেকে টাকা নিয়ে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য করেন।
এছাড়াও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের দায়িত্ব পালনকালে চিহ্নিত গরু চোর ও মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে মাসোয়ারা নিতেন।
সম্প্রীতি সময়ে বরিশাল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের দুধলমৌ গ্রামের মো: আবুল হোসেনের স্ত্রী ফোকোরন নেছা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এসআই এনামুলের সহায়তায় গত ১৭ নভেম্বর প্রতিবেশী আ: রাজ্জাক হাওলাদারের পুত্র জামাল হাওলাদার সহ ১১ জনকে আসামি করে আদালতে একটি মামা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং -সি. আর ৬১৬। সি আর মামলাটি বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের জন্য বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: সফিকুল ইসলামকে আদেশ প্রদান করেন। ওই মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন থানার এস আই এনামুল হক সহিদ। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায় গত ২২ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন এস আই এনামুল হক।
মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে মামলার বাদী পক্ষ ও আসামিপক্ষ দুই পক্ষ থেকেই ঘুষ নিয়েছেন এস আই এনামুল হক সহিদ। যাহার অডিও রেকর্ডসহ সিসি ফুটেজ রয়েছে।
উক্ত মামলার ১ নম্বর আসামি জামাল হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, এসআই এনামুল হক ঘটনাস্থানে সঠিক তদন্ত না করেই আদালতের তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেছে। মামলার বাদির পরিবারের লোকজনকে সাক্ষী করে তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর শুক্রবার ভরপাশা ইউনিয়নের দুধলমৌ গ্রামে মামলার বাদি ফোকোরন নেছা সাথে আমাদের কোন ঝগড়া-বিবাদের ঘটনা ঘটেনি। প্রতিপক্ষরা আদালতে একটি মিথ্যে মামলা করে আমার পরিবারকে হয়রানি করে আসছে। ওই মামলায় ১১জন আসামি করা হলে তদন্ত প্রতিবেদনে ৭ জন আসামির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ৭ জনের নাম বাদ দিয়ে প্রত্যেক আসামির থেকে টাকা নিয়েছেন এসআই এনামুল হক। এবং মামলার সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর কথা বলে আমার থেকে সদর রোডের বাকেরগঞ্জ ওয়াজ এন্ড অপটিক্স নামের আমার বন্ধুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে নগদ ৫ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন এস আই এনামুল হক। আমাদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েও মিথ্যে একটি ঘটনায় ভুয়া সাক্ষী বানিয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
আদালতে প্রেরণ করা তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার নাহিদ হাসান মামলার ভিকটিমদের জখম পর্যালোচনা করে যে সনদপত্র প্রদান করেছে তাতে ভিকটিমদের কোন জখম নেই। অথচ এসআই এনামুল হক বাদী পক্ষের হয়ে দুধল মৌ গ্রামের ভুয়া সাক্ষী জামাল হোসেন হাওলাদারকে সাক্ষী দেখিয়ে আদালতে মনগড়া একটি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
উক্ত মামলার বিষয় সরেজমিনে একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৩ নভেম্বর শুক্রবার ভরপাশা ইউনিয়নের দুধলমৌ গ্রামে মারামারির কোন ঘটনাই ঘটেনি। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে জামাল হাওলাদারের পরিবারকে হয়রানি করার জন্য আদালতে এই মামলাটি করা হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যম এসআই এনামুল হকের কাছে ঘুষ গ্রহণের বিষয় জানতে চাইলে তিনি ঘুষের টাকা ফেরত নিতে অনুরোধ জানায়। এসআই এনামুল হক এ সময় আরো বলেন, আসামি পক্ষকে বলেন ওদের সাথে গায়ে পড়ে একটি ঘটনা ঘটাতে তাহলে আমি ওই ঘটনা কেন্দ্র করে ওদের বিরুদ্ধে একটি মামলা নিবো।
এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো: সফিকুল ইসলাম বলেন, ঘুস গ্রহণের বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘুষ নেয়ার বিষয়ে যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে এসআই এনামুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।