অনলাইন সংস্করণঃ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতিতে ইসরাইলকে রাজি করাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে আসন্ন নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষে ভোট ও তহবিলের জন্য কাজ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মুসলিম সদস্যরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মুসলিম সদস্যদের জোট দ্য ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিল ‘২০২৩ যুদ্ধবিরতি আল্টিমেটাম’ নামে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছে।
ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিলে মিশিগান, ওহাইও ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারা রয়েছেন। এই অঙ্গরাজ্যগুলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ। কাউন্সিলটির পক্ষ থেকে বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সময় মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল ৫টার মধ্যে ইসরাইলের ওপর মার্কিন প্রভাব কাজে লাগিয়ে একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য।
বাইডেনের উদ্দেশে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আপনার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের নিঃশর্ত সমর্থন, অর্থ ও সামরিক সহায়তা ফিলিস্তিনের বেসামরিক লোকজনদের ওপর পরিচালিত সহিংসতাকে স্থায়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং একই সঙ্গে, গত নির্বাচনে যেসব মার্কিন মুসলিম ভোটার আপনার পক্ষে ছিলেন—আপনার প্রতি তাদের আস্থা দিন দিন কমে আসছে।
এতে আরও বলা হয়, ‘ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ইসরাইলের সরকারকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার জন্য আপনি যদি নিজের প্রভাব ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন, সেক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মুসলিম সদস্যরা আগামী নির্বাচনে আপনার জন্য প্রচার-প্রচারণা এবং তহবিল ও ভোট সংগ্রহ সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে।’
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে, দেশটির যে কোনো নাগরিক পর পর দুই বার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রথম মেয়াদ পার করছেন। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচনেও বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। বাইডেন নিজেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে বয়স একটি বড় বাধা। ২০২৪ সালে তার বয়স হবে ৮২ বছর এবং তার দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেকেই চাইছেন, তিনি যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত থাকেন।
সম্প্রতি স্মরণকালের ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়েছে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে। গাজায় ইসরাইলের হামলায় বাইডেনের ব্যর্থতাকে ঘিরে আরব ও মার্কিন মুসলিমদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের সর্বশেষ ইঙ্গিত এ চিঠি। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে ঢুকে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকেই গাজায় নির্বিচারে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।
হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি নিহত ও ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৫২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার প্রায় অর্ধেকই শিশু। আহত হয়েছেন আরও ২০ হাজার। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার ২৩ লাখের মধ্যে ১৪ লাখ জনসংখ্যা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।
যুদ্ধের শুরু থেকেই গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে চীন, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এমনিক জাতিসংঘও। কিন্তু ইসরাইল তা বারবার নাকচ করে দিচ্ছে এবং এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জোড়ালো সমর্থন পাচ্ছে দেশটি।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তিনি গাজায় হামলা বন্ধ করতে রাজি নন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবিও বলেছেন, যুদ্ধবিরতি থেকে কেবল হামাস লাভবান হবে।