বরিশাল অফিসঃ সাইদুর রহমান সাঈদ
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে। সেই কমিটির সভাপতি তিন বছর আগে বিয়ে করেছেন। আর সাধারণ সম্পাদকের সন্তানের বয়স এক বছর। শীর্ষ এই দুই নেতার পথ ধরে বিয়ে করে ঘরসংসার করছেন জেলা ছাত্রলীগের ১৭১ সদস্যের কমিটির শতাধিক নেতা।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ এর গ ধারা অনুযায়ী, কোনো বিবাহিত ব্যক্তি সংগঠনটির পদে আসতে পারবেন না বলে উল্লেখ রয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ হল এক বছর। অথচ বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটিতে আট বছর পার হলেও সম্মেলন হয়নি। এমনকি কবে সম্মেলন হতে পারে, নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী ছাত্রনেতারাও বছরের পর বছর অপেক্ষায় থেকে এখন হতাশ। এ অবস্থায় স্তিমিত হয়ে পড়েছে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম।
জেলা ছাত্রলীগের নেতারা জানান, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর সোহাগ-নাজমুল কমিটি যুবায়ের আদনান অনিককে সভাপতি ও তানভীর হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে। ওই বছরই ১৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে অনিক-তানভীর কমিটি।
এ ১৭১ সদস্যের জেলা ছাত্রলীগের কমিটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সভাপতি-সম্পাদকসহ শতাধিক নেতা বিয়ে করে ঘরসংসার করছেন। অনেকেই শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরি ও ব্যবসায় নিয়োজিত। এ অবস্থায় জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে।
সম্মেলনের অপেক্ষায় বছরের পর বছর পার করা ছাত্রনেতারা বলছেন, সম্মেলনের দীর্ঘসূত্রতার মারপ্যাঁচে পড়ে সম্ভাবনাময় অনেক নেতাই ছাত্ররাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ বেশিরভাগ নেতাকর্মী বিবাহিত।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী জাহিদুল ইসলাম বলেন, বছরের পর বছর সম্মেলনের অপেক্ষায় কাটিয়ে দিচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্কুলজীবন থেকে সংগঠনটির পেছনে সময়, মেধা ও শ্রম দিয়ে আসছি। আমরা চাই দ্রুত জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এই কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হোক।
জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল কবির রেজা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে সাত বছর আগে। সেই থেকে আমিসহ অনেকেই সম্মেলন ও নতুন কমিটির অপেক্ষায় বছরের পর বছর পার করছি। সেন্ট্রাল থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এখনো। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আমাদের দাবি, এই কমিটি ভেঙে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হোক।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসাইন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি যত দূর জানি, দ্রুত বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিষয়ে ১১ মার্চ কেন্দ্র থেকে ছাত্রলীগের প্রতিনিধিদলের বরগুনা সফরের কথা রয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আনিসুজ্জামান তুহিন বলেন, করোনা মহামারিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য সম্মেলন হয়নি। তবে শিগগিরই বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বরগুনার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
এছাড়া বরগুনা সদর উপজেলাসহ ছয়টি উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। বরগুনা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি দিতে পারেনি বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের এই কমিটি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।