সাইদুর রহমান সাঈদ
সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বলতে গেলে ‘চোখের পলকে পাল্টে গেল দক্ষিণাঞ্চলের জনপথ। তবে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পেতে এ সরকারের আমলেই আরও কিছু দাবি তুলেছেন বরিশালের বিশিষ্টজনেরা। সরকারের টানা তিন মেয়াদের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনায় পদ্মা সেতুর সঙ্গে সঙ্গেই পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দেশের তৃতীয় ‘পায়রা সমুদ্রবন্দর’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়। আগামী বছর উদ্বোধন হচ্ছে পদ্মা সেতু। পূর্ণাঙ্গ পায়রা পোর্ট চালু হতে কয়েক বছর সময় লাগলেও মাদার ভ্যাসেলে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে ৪০ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ নোঙর করা যাবে জেটিতে। এ লক্ষ্যে নির্মিত হচ্ছে ২ হাজার মিটার দীর্ঘ জেটি। ৬ হাজার ৫৬২ একর আয়তনের পোর্ট এলাকায় থাকছে আধুনিক সব সুবিধা।
পোর্টে যাতায়াতের সুবিধার্থে বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের কলাপাড়া থেকে পোর্ট পর্যন্ত নির্মিত শেখ হাসিনা ফোর লেন সড়ক মান বাড়িয়ে দিয়েছে ওই এলাকার। কলাপাড়ায় ধানখালী ইউনিয়নে সদ্য নির্মিত ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে গত জানুয়ারিতে। একই উপজেলার লালুয়ায় দ্বিতীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ের বালু ভরাট শেষে এখন পাইলিংয়ের কাজ চলছে। বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের পায়রা নদীর লেবুখালী পয়েন্টে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্ট্রেট নকশাথয় নান্দনিক সেতু নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। রাতের বেলা সেতুর বাতিতে আলো ঝলমল করে পুরো এলাকা, যা ভ্রমণপিপাসুদের নজর কেড়েছে। এই সেতু নির্মাণ শুরুর আগেই পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা সড়কের তিনটি নদীর ওপর শেখ জামাল, শেখ কামাল ও শেখ রাসেল নামে তিনটি সেতু নির্মিত হয়েছে সরকারের আগের মেয়াদে। বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের কীর্তনখোলা নদীর ওপর নির্মিত দপদপিয়া সেতু ২০১১ সালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পায়রা নদীর তীরে লেবুখালী পয়েন্টে দেশের অন্যতম বৃহদায়তনের শেখ হাসিনা সেনানিবাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১১ সালে উদ্বোধন হয় দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়।
বরিশালে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও হয়েছে। নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের। বরিশাল-খুলনা সড়কের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজও শেষ হচ্ছে আগামী বছর। ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কীর্তনখোলা নদীর তীরে কর্ণকাঠি এলাকায় ৫ মে মেরিন একাডেমি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা দেশের মানুষ পেতে শুরু করেছে। কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দরের সুবিধা কাজে লাগাতে বরিশালের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে জমিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন উদ্যোক্তারা। পদ্মা চালুর পরপরই এখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে শিল্প-গার্মেন্ট। বিসিক বরিশালেও অনেক নতুন শিল্প হচ্ছে। তবে দক্ষিণাঞ্চল ঘিরে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার পুরোটা কাজে লাগাতে বরিশাল ভোলা-সেতু নির্মাণ, ভোলার গ্যাস বরিশালে সরবরাহ, ভাঙ্গা-কুয়াকাটা ছয় লেন মহাসড়ক, ভাঙ্গা-পায়রা রেললাইন, বরিশাল-খুলনা ছয় লেন মহাসড়ক এবং বরিশাল নগরীতে একটি বাইপাস নির্মাণ জরুরি। বাইপাস এখন বরিশালবাসীর প্রধান দাবিতে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পৈতৃক নিবাস পদ্মার পশ্চিম পারে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রতি তার অনেক আবেগ। এক যুগ আগেও অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তিনি দুই হাত ভরে উন্নয়ন দিয়েছেন। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। মেরিন একাডেমি হয়েছে।
মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নির্মাণকাজ চলছে। শিক্ষায় পরিপূর্ণ হতে এখন একটি মেডিকেল ও একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সময়ের দাবি। পদ্মা সেতু চালু হলেই পরিবর্তন দৃশ্যমান হতে শুরু করবে। পায়রা বন্দরের কর্মপরিসর বাড়বে। ক্যান্টনমেন্ট এ অঞ্চল সমৃদ্ধ করেছে। এখন অপেক্ষা ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা-পায়রা ফোর লেন এবং রেললাইন। একই সঙ্গে বরিশাল-খুলনা ছয় লেন এবং নগরীতে একটি বাইপাস নির্মিত হলে উন্নয়ন হবে যুগোপযোগী।