আহমেদ জামান শিমুল//
তারেক মাসুদ তার ছবি নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। কাঁধে প্রজেক্টর নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে। ছবি বানানো থেকে শুরু করে মুক্তি কিংবা প্রচারণায় তিনি প্রচলিত নিয়ম নীতির ধার ধারেন নি। এতে করে তিনি তার ছবি মানুষকে খুব সহজে দেখাতে পেরেছেন। মানুষকে তার বক্তব্যের সঙ্গে অনেকটাই যুক্ত করতে পেরেছেন। ঠিক সেই পথেই হাঁটছেন দেশের নবীন এক নির্মাতা খন্দকার সুমন।
এ নবীনের ‘সাঁতাও’ ছবিটি আসছে ২৭ জানুয়ারি। সে ছবির প্রচারণায় তিনি ছুটে যাচ্ছেন কখনো বগুড়ায়, কখনো রংপুর কিংবা ময়মনসিংহ। আর এ ছুটে চলার মাঝে তিনি ঘটিয়েছেন এক কাণ্ড। বাসের মধ্যে ক্যানভাসারদের মতো করে দাঁড়িয়ে করলেন নিজের ছবির প্রচারণা।
রংপুর থেকে ঢাকা ফিরলেন খন্দরকার সুমন। পথে যাত্রা বিরতিতে যাত্রীরা একটু বিরক্ত। ড্রাইভারে অযথা দেরি করছিলো। সুমন ভাবলেন এ সময়টাকে কাজে লাগানো দরকার। দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলেন, “আমি আসলে হকার নই। একজন সিনেমা নির্মাতা। আমাদের এ রংপুর অঞ্চলের ভাষা নিয়ে একটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। নাম হচ্ছে ‘সাঁতাও’। আপনারা জানেন কিনা জানি না
কেনো এমন কাণ্ড। সুমনের ভাষ্যে, “দর্শকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগটা করতে চেয়েছি। আমাদের ছবিটি যেহেতু এ জানুয়ারিতেই মুক্তি। আবার মানুষকে জানাতে হবে ছবিটি আসছে তাই এমনটা করা। আমি দেখতে চেয়েছিলাম ওখানে উপস্থিত মানুষজন কীভাবে বিষয়টিকে নেয়। যা দেখলাম তারা খুবই পজেটিভলি নিয়েছি। আমার সামনেই বেশ কয়েকজন মোবাইলে ‘সাঁতাও’-এর ট্রেলার বের করে দেখেছে। অর্থাৎ তারা সঙ্গে সঙ্গে যাচাই করে দেখেছে আমার বক্তব্য সঠিক কিনা। যখন ট্রেলার দেখে তাদের ভালো লেগেছে তখন কিন্তু তারা ছবিটির প্রতি আগ্রহী হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।”
“আমরা ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে প্রচারণা চালিয়ে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া আপনার ছবিকে ব্র্যান্ডিংয়ে সহায়তা করে। দর্শককে হলে আনতে হলে আমার বিশ্বাস তাদের কাছে যেতে হবে। সমস্ত ইগোকে ফেলে দিয়ে তাদেরকে জানাতে হবে নিজের ছবির কথা। আর সরাসরি মার্কেটিংয়ের চেয়ে শক্তিশালী কিছু নেই। আমি যখন সরাসরি নিজে নির্মাতা হয়ে তাদের কাছে আমার ছবির ব্যাপারে বলেছি তখন তাদের কাছে তখন ছবিটির ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে।”
সমাজের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী যেকোনো কাজেরই সমালোচনা থাকবে। তাকেও শুনতে হয়েছে পরিচালক কেনো হকারদের মতো তার ছবি নিয়ে বাসের মধ্যে গিয়ে প্রচারণা চালাবে? এমনটার জবাবও তিনি দিয়েছেন, ‘ওই যে বললাম ইগোটাকে ঝেড়ে ফেলে দর্শকের কাছে যেতে হবে। আপনার ছবিটা যে আসছে এ তথ্যটা তো তাকে জানাতে হবে। এর জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ক্যানভাসারের মতো কথা বলা লাগলে বলবেন। দিনশেষে দর্শক ছবি না দেখলে তো নির্মাতা হিসেবে লাভ নেই।’
সুমন জানালেন, রংপুর অঞ্চলের যে সকল জায়গায় বাস যাত্রা বিরতি দেয় সে সকল জায়গায় তারা ‘সাঁতাও’-এর প্রচারণা চালাতে চান। খুব শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু করবেন।
গণঅর্থায়নে নির্মিত ‘সাঁতাও’-এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আইনুন পুতুল ও ফজলুল হক। আইডিয়া এক্সচেঞ্জের ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন শরিফ উল আনোয়ার সজ্জন। পরিচালনার পাশাপাশি কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন খন্দকার সুমন।