আজকের গণমত ডেস্কঃ
দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে হারাম খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি বর্জন (পরিহার) করা। কারণ, হারাম উপার্জনে সম্পৃক্ত থেকে যতই দোয়া করা হোক না কেন, তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার রাসুলগণকে যা করার আদেশ করেছেন ইমানদারগণকেও সে কাজই করার আদেশ করেছেন।’
অতঃপর আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু (হালাল) হতে ভক্ষণ কর, এবং নেক কাজ কর।’ আল্লাহ আরও বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু রিজিক হিসেবে দিয়েছি, তা থেকে আহার কর।’
এর ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরামগণ বলেন, যারা হারাম উপার্জন, হারাম খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে তাদের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। সে যতই দোয়া করুক না কেন।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২১৩৯।) দোয়া সব ইবাদতের মূল।
যে বান্দার দোয়া কবুল হয় না–
যে বান্দা হারাম খায়:
হারাম খাবার খাওয়া ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। হাদিসে এসেছে রাসুল (সা.) বলেন, হারাম খাবার, পানীয় ও বস্ত্র অর্থাৎ হারাম উপার্জনে যাপিত জীবন দোয়া কবুলের অন্তরায়। যে ব্যক্তি হারাম পরিহার করতে পারে না, তার দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা যায় না। বিপরীতে যার জীবিকা পবিত্র, তার দোয়া কবুল হওয়ার কথা জানিয়েছেন। রাসুল (সা.) একদিন সাদ (রা)-কে বলেন, ‘হে সাদ! তোমার খাদ্য পবিত্র কর, তাহলে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত (যার দোয়া কবুল হয়) হতে পারবে।’ (আল মুজামুল আওসাত: ৬৪৯৫)
নিরাশ হওয়া ব্যক্তি:
যে ব্যক্তি দোয়া করে হতাশ হয়ে যায় তার দোয়াও আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি-না সে তাড়াহুড়ো করে আর বলে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। (বুখারি: ৬৩৪০) তাই রাসুল (সা.) বলেছেন, দোয়ার পর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করবেন।
যিনি আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব ছেড়ে দেন:
হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎ কাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তাআলা শিগগির তোমাদের ওপর তার শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তার কাছে দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া গ্রহণ করবেন না। (তিরমিজি: ২১৬৯)
তাই আল্লাহ যেসব কাজের আদেশ দিয়েছেন তা যথাযথভাবে পালন না করলে ওই ব্যক্তির দোয়া কবুল হয় না।
আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট কারী:
হাদিসে আছে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করে, সে এই পাপের শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গায়ই ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মুসলিম দোয়া করার সময় কোনো গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির কোনো একটি দান করবেন। (১) হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করবেন, (২) অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন এবং (৩) অথবা তার কোনো অকল্যাণ বা বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। এ কথা শুনে সাহাবিরা বলেন, তাহলে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি (রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (আত-তারগীব: ১৬৩৩)
দোয়া করার সময় অমনোযোগী:
যখন আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয় তখন পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দোয়া করতে হবে। কারণ, অবচেতন মনের দোয়া আল্লাহ গ্রহণ করেন না। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া কোরো। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না। (তিরমিজি: ৩৪৭৯)