মোঃ ওসমান গনি ইলি ঈদগাঁও কক্সবাজার।।
রাতের আধারে ঈদগাঁহ হাইস্কুলের অফিস ভাংচুর ও নথি চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত রাত আনুমানিক ১.০০ ঘটিকার সময় নৈশ প্রহরির চোখ ফাকি দিয়ে ঈদগাহ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও হিসাব রক্ষাকারীর অফিসে ভাংচুর ও তান্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় অফিসের আলমিরা ভেঙে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবের বিভিন্ন ফাইল ও নথিপত্র চুরি করেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
অত্র স্কুলের ছাত্র ও ছাত্রীসহ শতাধিক মানুষে বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ দাবি করে আসছিল একটি অংশ। তারা প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাতকে স্কুল থেকে তাড়ানোর জন্য ও এই চুরি ঘটনা টি ঘটিয়ে পাশানোর চেষ্টা করছেন।
গত ২৮ আগস্ট থেকে চলমান ঈদগাহ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম,অন্যায় ও দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ দাবি করে আসছিল একটি অংশ। অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্যে প্রধান শিক্ষককে তার পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেন ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবচ চাকমা। গঠিত করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও। এদিকে তদন্ত কর্মকর্তার তদন্ত ও পুরা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে একটি কু-চক্রী মহল। তারই পেক্ষিতে গতরাতে এই ভাংচুর ও ফাইল চুরির ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করছেন শিক্ষকদের কিছু অংশ। জানা যাই গত রাত নয়টার দিকে ঈদগাঁও বাজারের একটি দু-তলা ভবনে কয়েকজন শিক্ষক ও তাদের ভাড়া করা লোকদের নিয়ে গোপনে একটি মিটিং করা হয়। ধরণা করা হচ্ছে সেই গোপন সংলাপের পরেই নৈশ প্রহরি রাতে খাবার খেতে গেলে সুযোগ বুঝে তারা স্কুলে প্রবেশ করে এবং নিচতলার গ্রিলের তালা সহ দুটি অফিস কক্ষের তালা ভেঙ্গে এইসব তান্ডব ও লোটপাট চালানো হয়।
হাইস্কুলের নৈশ প্রহরি বাবুল জানান- রাত ১০ ঘটিকার দিকে সে বাড়িতে গেলে স্কুলের মূল ফটকের দায়িত্ব দিয়ে যান সোনাধন নামের এক দারুয়ানকে। বাড়ি থেকে ফিরে এসে যথারীতি স্কুলের সব স্থান পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখতে পায় স্কুলের নিচতলার গ্রিল সহ দুটি অফিসের দরজার তালা ভাঙ্গা। তার সন্দেহ হলে ফোন করেন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল হককে। সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ স্কুলের অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে দেখতে পান অফিসের ভিতরে থাকা বিভিন্ন আলমিরার দরজা খুলা এবং কাগজপত্রগুলো অগুছালো অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সহকারি প্রধান শিক্ষক বিষয়টি তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান।
এদিকে আজ সকালে ঈদগাঁও থানার দায়িত্বরত অফিসারসহ ঘটনা উৎঘাটনে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঈদগাঁও বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানান ঘটনা শুরুর পূর্বে মধ্যরাতে হাইস্কুলের দুইজন শিক্ষক ও তাদের সাথে বেশ কয়েকজনকে স্কুল গেইটের আশে পাশে বেশ কয়েকবার ঘুরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছিল। এমনকি ঐ শিক্ষকদের কারণে স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন হয়েছিল বলেও জানান অন্য আরেকজন ব্যবসায়ী।
এদিকে স্কুলের অন্য একজন শিক্ষক বলেন- পুরো স্কুল ভবন সিসিটিভি ক্যামরার আওতায় ছিল। কিন্তু আশিক নামের একজন শিক্ষক গত দু-দিন আগে কারও বাঁধা না মেনে ইউএনও স্যারকেও না জানিয়ে সিসিটিভি ক্যামরার রেকর্ড লাইন বন্ধ করে দেন। ঠিক তার একদিন পরেই আজকে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটানো হল।
এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল হক আরো জানান- সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে হারিয়ে যাওয়া ফাইল সমূহ নিশ্চিত হলে থানায় জিডি করা হবে।
ঈদগাঁহ হাইস্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অবিভাবকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন – প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাতকে ফাসাতে পরিকল্পিতভাবে এই সমস্ত নথিপত্র চুরি করা হয়েছে বলে ধারণা তাদের।
এদিকে অব্যাহতি পাওয়া প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাতের সাথে কথা হলে তিনি বলেন- ষড়যন্ত্রকারীরা আমাকে ফাঁসনোর জন্যে আর কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে এই ধরনের ঘৃণিত কাজ করেছেন। তিনি আরো বলেন- স্কুলের যাবতীয় হিসাব-নিকাশ সহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র অফিসে সংরক্ষণ রাখা ছিল যা তদন্ত কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু তদন্তের জন্যে যথার্থ। তার দাবি মূলত তাকে অপরাধী বানাতে এইসব নথিপত্র চুরি ও অফিসে তান্ডব চালানো হয়।
এইদিকে এই ঘটনার সাথে যারা প্রধান শিক্ষক জড়িত বলে দাবি করছেন তিনি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তিনও আরো বলেন – যে সমস্ত নথিপত্র আমি নির্দোষ প্রমাণে যথেষ্ট তা কেন চুরি করব? এসময় তিনি এই বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান।