বাড়ির সামনে থাকা বড় পুকুরটির শানবাঁধানো ঘাটে বসা। এমন শান্ত-নিবিড় ছায়াঘেরা পরিবেশে মন চাইলে গা এলিয়ে শুয়ে পড়া। এরপর কী হবে? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, জলে ছোঁয়া বাতাসের হিমশীতল শিহরণে রাজ্যের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাবে। এক সময়ের জমজমাট জমিদারবাড়িটি আজ কেমন চুপশে গেছে! এখানের রঙমহলের সেই রঙিন জীবন নেই। বেশির ভাগ ভবনই জরাজীর্ণ-ঝুঁকিপূর্ণ। উনিশ শতকে নির্মিত বালিয়াটির জমিদারবাড়ি এখন শুধু ইতিহাসপ্রেমীদের মনের কৌতূহল মেটায়।
মানিকগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্ব দিকে সাটুরিয়ায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো বাড়িটি। বালিয়াটির জমিদারেরা উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ১০০ বছরের বহু কীর্তি রেখে গেছেন। যা জেলার পুরাকীর্তিকে আজও সমৃদ্ধ করে চলেছে। বিভিন্ন ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খ্রিষ্টীয় উনিশ শতকের দিকে বাড়িটি নির্মিত হয়। বালিয়াটির জমিদারদের পূর্বপুরুষ গোবিন্দ রাম সাহা ছিলেন ধনাঢ্য লবণ ব্যবসায়ী। এই বাড়ির উত্তর-পশ্চিম অংশে লবণের একটা বড় গোলাবাড়ি ছিল। যে কারণে বাড়ির নাম রাখা হয়েছিল গোলাবাড়ি। সেকালে গোলাবাড়ির চত্বরে বারুনির মেলা বসত। পশ্চিম দিকে তালপুকুরের ধারে আয়োজন করা হতো রথ উৎসব। গোবিন্দ রামের উত্তরাধিকারীদের কেউ একজন জমিদারি লাভ করেন। এরাই পরে বাড়িটি সংস্কার করেন। ঢাকার জগন্নাথ মহাবিদ্যালয় (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এঁদেরই বংশধর বাবু কিশোরীলাল রায়।
ঢাকার গুলশান থেকে এখানে ঘুরতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজধানীর খুব কাছেই মানিকগঞ্জ। তাই পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। পুরোনো ভবনগুলো দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেছি আমরা।’ জমিদারবাড়ি ৫.৮৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এর ভেতরেও আরেকটি পুকুর রয়েছে। বাড়ির সম্মুখভাগে চারটি সুবিন্যস্ত সিংহদ্বার সমৃদ্ধ চারটি বিশাল প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে। এখানে সাতটি প্রাসাদতুল্য ইমারতে মোট ২০০টি কক্ষ আছে বলে জানা গেছে। স্থাপনাগুলোয় দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য করা। ভেতরের রঙমহল নামে খ্যাত ভবনে বর্তমানে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। মূল প্রাসাদের সামনের পিলারগুলো সব সময় পর্যটকদের আকর্ষণ করে। মোটা লম্বা লম্বা সারিবদ্ধ পিলারগুলো জমিদারদের বিশালতার কথাই যেন মনে করিয়ে দেয়। পুরো বাড়িটি এখন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতাধীন
ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ঢাকা থেকে ঘুরতে যাওয়া সংবাদকর্মী রাশেদ আমিনুল বলেন, ‘ভেতরের বেশ কিছু ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এগুলোয় ঝুঁকিপূর্ণ লেখা সাইনবোর্ড দেওয়া। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ভিডিও করা যায় না।’
উত্তর দিকের কিছু দূরে একটি পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে। এই বহির্মহলে কাঠের কারুকার্য করা। ভবনটিতে এক সময় প্রাসাদের চাকর-বাকর, গাড়ি রাখার গ্যারেজ, ঘোড়াশাল ছিল বলে ধারণা করা হয়।
কর্তৃপক্ষ জানান, জমিদারবাড়িতে প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য জনপ্রতি দেশি দর্শনার্থী ১০ টাকা, সার্কভুক্ত ১০০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থীদের ২০০ টাকা।
সাটুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এই বাড়িতে সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা পর্যটকদের আরও মোহিত করবে।’